❤️❤️অহংকার 💖💖

দূর্গা পূজার আয়োজন শেষ করে দূর্গা মণ্ডপ থেকে বাড়ি ফিরছে। মুহূর্তে যেনো চশমা টা আবছা হয়ে গেলো। এ কাকে দেখলাম আমি? মণ্ডপ থেকে দুর্গার বাড়ি বেশি দূর নয়, বাড়ি ফিরতে ওই 2 3 মিনিট লাগে হবে। সে দিন আর মণ্ডপে যায় নি দূর্গা। সারাটা দিন ঘরে মুখ গুঁজে পরে ছিল। সন্ধেই নিজেই নিজেকে বুঝিয়ে ছিল, যা কাটিয়ে ওঠা প্রায়,2 বছর হতে এলো সেই কারণটা কে নিয়ে আবার কেনো নতুন করে দুঃখ পাওয়া! যাক পরের দিন সকালে শাড়ি পরে মণ্ডপে ধুপ ধুনো সাজানো শেষ করে, কে ডাকলো তাই, ফিরে তাকিয়েছে।

লাল শাড়ি, লাল টিপ, হলুদ ব্লাউজ, আগের থেকে চুল গুলো অনেকটা বোরো, সারা পিঠ জুড়ে চুলের মায়া, এই মায়া কাটানো বড্ডো কঠিন, তবুও যেনো ফিরে আসতে হয়। আর ওই কাজল কাল চোখ, যার প্রতিটি ক্ষেত্রে অনেক অনেক উচ্ছাস ছিল, সেই চোখ টায় কেমন যেনো নিঝুম, দুপুরের রোদ যেনো সব জল শুকিয়ে ফেলেছে। চাঁদ কে যেনো , মেঘ পুরোটায় লুকিয়ে রেখেছে। আগের মতো ডাক নেই কারণ অকারণে, এক দিষ্টে তাকিয়ে থেকে হাঁসি নেই, আমি বকলেও সেই বকা অগ্রাহ্য করে খালি বক বক করা নেই। এখন শুধু মানুষ ভোলানোর কথা আছে, ভুল বললাম, নিজেকে লুকানোর চেষ্টা মাত্র।
অভ্যাস পাল্টাতে আমারও কম সময় লাগেনি, শুধু যাকে পূর্ণিমার চাঁদ হিসেবে দেখতে অভ্যাস পাল্টে ছিলাম, সে এখন তৃতীয়ার চাঁদ হিসেবে আকাশে বিরাজ করে। আমি জানতাম আমার চলে আশা টা বড্ডো ভোগাবে দুর্গাকে, তবুও যেনো যেদ করে সম্পর্ক টা শেষ করে ফেলেছিলাম।
আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর, আমাদের আর কোনো রকম কোনো যোগাযোগ হয়নি। চাকরিটা পেয়ে একটা বছরও অপেক্ষা করি নি, বিয়ে সেরে ফেলে ছিলাম।যথেষ্ট সুন্দর মেয়ে ,ভালো কথা বলে, ভালো পড়াশোনায় ,ভালো দেখতে , সবই ভালো, তবু দুর্গার মত কখনো ডাকেনি আমায়। কখনো ভালবাসতে চায় নি পাগলের মতো। পাগলী তো নয় সে দুর্গার মতো, তাই হইতো।
আমার বৌভাতের রাত্রে দুর্গা এসেছিল ,পাড়ায় বাড়ি নিমন্ত্রণ তো থাকেই একে অপরের পরিবারের প্রতি। ও সেদিন খেয়েছিল কিনা ঠিক বলতে পারবো না, তবু আমি নিজে গিয়ে তো ওকে খেতে বলেছিলাম। আমার ব্যাস্ততা টা সেইদিন অনেক বেশি, স্বাভাবিক ভাই, আমি নতুন বিবাহিত, জীবনের নতুন অধ্যায়, নতুন সম্পর্ক তৈরি।
দূর্গা, তোর সাথে আর যোগাযোগ করা হয় নি এই মাস পাঁচেক, সম্পর্কটাই ঠিক মানিয়ে নিয়ে উঠতে পারি নি। তাই বেরিয়ে এলাম, কিছু মনে করিস না যেনো। অহংকার।।।। ছি, কি বিচ্ছিরি ভাবে কথা টা বলেছিলাম। দুর্গার উত্তরটা আমি সেদিন বুঝে উঠতে পারি নি। বাবাই দা, তোমার সাথে আমার সম্পর্কটা কী ছিল! যে তুমি মানিয়ে উঠতে পারলে না। উত্তর দিতে পারি নি। রাত্রে কথা টা মনে না থাকলেও, পরের দিন দুপুরে দূর্গা ছাড়া কিছু ভাবতে পারি নি। ও কেনো বললো কথা টা? বাবাই দা বা বললো কেনো? ও তো বাবি বলেই অভ্যস্ত। ও এখন কি করছে? ঠিক আছে কি না? গলার কাছটা কেমন দলা পাকিয়ে আসছিল, গুছিয়ে উঠতে পারছিলাম না। মৌ কে নিয়ে ওর বাবার বাড়ি যেতে হবে, ফিরেই আবার ভুবনেশ্বর ফিরতে হবে, বিয়ের খরচের সব হিসেব মিলাতে হবে, তার মধ্যে মৌ এর ঘ্যানঘ্যানানি, হানিমুন আর হানিমুন। যাক আবার এই সব এর মধ্যে ঢুকে দূর্গা গেলো মাথা থেকে বেরিয়ে। এক বারেই যে বেরিয়ে ছিল বললে ভুল করবো। শুধু ভেবে পাচ্ছিলাম না, যে মেয়েকে এই পাঁচ মাসে এক বার ও ফোন করে খবর নেই নি, একবার ও মনে পড়ে নি, সে কেনো মনের মধ্যে ঢুকে পড়ছে বুঝতে পারছি না।
দুবছর কেটে গেছে, আজ আবার এসব কথাগুলো কেন এত করে মনে আসছে বুঝতে পারছিনা।মৌৌ আমি ভালো নেই তা তো নয়, তবু নিজের প্রতি বড্ডো অপরাধ বোধ কাজ করছে। তুই নিজে থেকে কথা বলবি না আমি জানি, বড্ডো জেদ বেড়েছে তোর। তোর সামনে প্রায় 1 ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি, তুই তাকিয়েও দেখিস নি একবার, তোর বড্ডো বার বেড়েছে। যে চোখ আমায় ছাড়া অন্য কিছু খুঁজতো না, সে চোখ আমায় কেনো এতো অপরাধী বানাচ্ছে। তোকে তো বলেছিলাম আমি তোকে কখনোই রাখতে পারবো না, তুই যোর করে ঘাড়ে চেপে ছিলিস, কতবার তোকে বলেছি, আমি তোর কখনোই হতে পারবো না, আমি তোকে কখনোই আমার ভবিষ্যৎ এ রাখতে পারবো না, তবু কেনো আজ নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে? চিৎকার করে তোকে কথা গুলো বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। তোর গলা কেটে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে, তোকে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে।
কেনো বলতো তুই আমাকে ভালোবেসেছিলি? আমি বলেছিলাম তোকে ভালোবাসতে?

তোকে কথা গুলো জানাতে হবে, আমি তোর মেসেঞ্জার, ফোন নাম্বার, ইনস্টাগ্রাম, কোনো কিছুই পেলাম না খুঁজে। তাই বাধ্য হযেই তোর মেইল আইডিতে মেইল করতে বাধ্য হলাম। তুই মেইল এর উত্তরে লিখলি, আমি তো কাল বাইরেই থাকবো, দেখা করে নিও, দিয়ে নিচে তোর নাম্বার। আমার সাথে দেখা করার জন্যে এই বার প্রথম মনেহয় তুই বাইরেই থাকবি বললি, আগের গুলো তো সকাল থেকে মেতে থাকতিস।

দেখছি তুই আসছিস, মাস্টার্ড একটা কুর্তি প্লাজো সেট, দারুন দেখাচ্ছে তোকে। না না না তবুও আমি আজ তোকে যে গুলো বলতে এসছি না বলে যাবো না।

দূর্গা::-- কী বলবে বলো। আমার কাজ আছে যেতে হবে।

উত্তর পাচ্ছি না তোর এই কাজের বাহানার। ভালো আছিস? তোর বরাবর এর উত্তর, খারাপ থাকার কথা ছিল বুঝি? বিব্রত লাগলো নিজেকেই। তবুও সামলে উত্তরে বললাম। পাল্টে নিয়েছিস অনেকটা। আগে থেকেই জানা ছিলো তুই এর উত্তরে কিছুই বলবি না। তাই তোকে কিছু বলতে গেলাম। যা আমি যে ভেবে এলাম তোকে কিছু বলবো, বলতে পারছি না কেনো? কি হলো আমার?

দূর্গা::-- কী বলবে? আজ আমায় নিয়ে তোমার প্রশ্ন কেনো মনের মধ্যে? তাই তো!

আমি জানতাম তুই আমার মুক দেখেই সব বলে দিতে পারিস। অবাক হই নি। উত্তরে আবারো বললাম, হ্যাঁ,, আমি বুঝতে পারছি না।

দূর্গা::-- যা সেই দিন হয় নি তা নিয়ে বেকার মাথা ঘামিয়ে কোনো লাভ হয় না। তা আজ ও হবে না।

আমি কি তোকে বলেছি প্রেম করতে। আমার বউ আছে। আমি তাকে খুব ভালোবাসি।

দূর্গা::-- আমাকে বলছো? না নিজেকে বোঝাছো?

আবার ও দুর্গার একটা প্রশ্নে থমকে গেলাম।

দূর্গা::-- আমি তোমাকে প্রেমের কথা বলি নি। আমি বলতে চেয়েছি, যা সেই দিন উত্তর দিতে পারি নি তা আজও পারবো না। খালি এই সব প্রশ্ন করে আমায় বিব্রত করো না। আমি আমার মত ভালো আছি। আর রইলো তোমর আমার সম্পর্কের কথা।। তো মনে রেখো, কিছু মানুষ কে বিয়ে করা না হোক, শরীর ছোয়া না হোক, চুমু খাওয়া না হোক, এক সাথে বেঁচে থাকাটাও না হোক, তবুও একটা বিকট শব্দের মত অধিকার বোদ থাকে । যেটা তোমার প্রতি আমার আছে, আমার কাছে এইটাই আমার ভালোবাসা, ভালোথাকা, সব কিছু। যা তুমি বুঝবে না। আর বলি একটা কথা, আমার কাছে আমার এই অধিকারটাই সম্পর্ক। মেনে নিয়েছি সব। কোথাও তোমায় দোষ দেই না। কোথাও তোমার পুরোনো স্মৃতি মুছে ফেলি না। তুমি ঠিক 4 বছর আগে যেমন ছিলে বাবি তেমন করেই আছো আমার মাঝে। মধ্যে খানে কিচ্ছু নেই। আসছি।

তুই আমার মাথাটা আবার খারাপ করে এগিয়ে গেলি। কিন্তু আজ আমার অহংকার হচ্ছে, আমাকে কেউ এই ভাবে ভালবাসে দেখে।।। আবার কোনো একটা ভিড়ে হারিয়ে গেলাম আমরা। খুব দূরে খুব নির্জনে। নিজের অজান্তেই আমিও হইতো তোকে এখনো ভালোবাসি।


Comments

Popular Posts