কাঠগোলাপ, 💖💖

কাঠগোলাপের মায়া কাটানো বড্ডো কঠিন। মায়া কাটাতে গেলেই যেনো অপরাধ কাজ করে, যেনো সবের জন্য আমি দায়ি, আমি দোষী, আমি বেমানান।

গত তিন বছর ধরে বড় করার পর এই প্রথম ধরেছে তিন তিনটে কাঠগোলাপ। ধরলি ধরলি, সেবোলে এমন সময় যে মিতিন টাও নেই।সে চলে যাওয়ার পর তুই আর মিতিন তো আমাকে কষ্ট থেকে বের করে নিয়েএসেছিলি।

তোকে প্রথম যখন নিয়ে এসে বাড়ির ছাদের পূর্ব দিক করে তোর স্থান নির্ধারণ করলাম, তুই যেনো সব থেকে বেশি খুশি হয়েছিলিস।

নিজে আনতে পারি নি তোকে। বাজার যাওয়ার সময় সেদিন, রাস্তায় যে রস্কোটায় চরে ছিলাম, সেই রিস্কোর লোক টায় তো তোকে এই ছাদ পর্যন্ত এনে দিলো। আমি কি আর এই 72 বছর বয়সে এই ভারি টব টা তুলতে পারি বল।

প্রথম কই দিন তুই বেশ তরতরিয়ে বারছিলিস, তোকে রোজ সকালে জল দিতাম, তোর গোড়ার মাটি গুলো ঘাটা ঘাটি করতাম, আর বিকেলে মিতিন চা দিয়ে গেলে তোর পাশে মিতিন আর আমি মিলে বসে কত গল্পঃ করতাম, আর আশার সময় একটু জল দিয়ে দিতাম তোকে। সারা দুপুরের রোদ যেনো তোকে একটুও ভেঙ্গে ফেলতে না পারে।

তারপর মনে হলো দুদিন তোর খুব মন খারাপ। মন কেমনে তুই পুরোটায় ডুবে মারছিস। তার পর পূর্ণিমার দিন আমি আর মিতিন ছাদে গিয়ে দেখলাম , তুই তো পূর্ণিমার চাঁদের সাথে ভাব করে আমাকে নতুন স্পর্শ দিলি। আমিও তোর স্পর্শ কে ভালোবেসে চাঁদ কে দেখতাম আর হাঁসতাম।

রাত শেষে যখন ভোর হতো, আমি ছুটতাম তোর কাছে। গিয়ে ওই টুল টা নিয়ে একবার তোর বাম দিকে, একবার তোর ডান দিকে। তোকে দেখতাম, দেখতাম আমার ওই দিন গুলো, যখন আমি নীলের এপাশ ওপাশ ছুটতাম। সেই নীল আজ কত বড়। তারও এখন ওই বয়সের একটা পিচ্চি বাচ্চা আছে।

নীল চাকরি সূত্রে এখন বিদেশে। বউ টা থেকে যেতে ছেয়েছিল আমার সাথে। কিন্তু আমি যখন আমার স্বামীকে ছেড়ে থাকতে পারতাম না, তখন ঐ বাচ্চা মেয়েটায়বা কেনো থাকবে ওর ভালোবাসা ছেড়ে? আমি নিজে ওদের বলেছিলাম,""আমার বাড়ির নিচ তলাটা ভাড়া দেবো। আর আমি মীতিন কে নিয়ে ঠিক থেকে যাবো। তোরা একসাথে থাক, তোদের একসাথেই খুব ভালো লাগে।""

মিতিন আমার বাড়িতেই থাকে। আমার বাবার বাড়ির দেশের লোক। বড় নেই, খুব অল্প বয়সে বিধবা, তার পর শশুর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়, বাবার বাড়িতে কেউ নেই নি, বাচ্চা কাচ্চা হইনি। সেই দেখে আমার বাবার খুব কষ্ট হয়ছিল , হঠাৎ ওই মেয়ে শুদ্ধ আমায় চিঠি দিয়ে বলে, তোর তো চাকরি ছেড়ে বাড়ি পরে থাকলে হবে না, তাই এই মেয়ে টা পাঠালাম। ওকে বাড়িতে রাখিস, খেতে পরতে দিস,। দিয়ে আরো সব কথা। বাবার চিঠির আয়তন দেখে আমি একটা ল্যান্ড লাইন এর ব্যাবস্থা করে দিয়ে ছিলাম। তার পর থেকে বাবা রোজ বিকেলে আমায় ফোন করত।

যায় হোক, নীলের বিদেশ ফিরে যাওয়া হলো অনেক দিন। এই তো বছর ঘুরিয়ে আসছে ওদের যাওয়া। পুজোতে আসবে এই বার। টিকিট কাটা শেষ। এই বার মা এর সাথে ওরাও আসছে।

তিতির তো অনেক বড় হয়ে গেছে। এঞ্জেলিনা ,, আমি আর ওর মা ওকে তিতির বলেই ডাকি।

আচ্ছা শোন মিতিন , তিতির আসার আগে গাছ টা কে একটু ঘেরে দিসতো। নয়লে আগের বারের মতন, আবার সব পাতা গুল নষ্ট করবে।

আগের বার এসে কী যে করেছিল , সব পাতা গুল কেটে নিয়ে, ও শাক তৈরি করেছিল। শাক নাকি ঠাম্মীর শরীর কে আরো শক্ত করবে। হায় রে মেয়ের কাণ্ড।

আজ আমার বয়স প্রায় 75 ছুঁই ছুঁই। দুদিন পর চলে যাবো পৃথিবীর সব মায়া ত্যাগ করে। তখন তোকে কে দেখবে বলতো! আমি যদি কাউকে তোর দায়িত্ব দিয়ে যায়, তুই মানিয়ে নিতে পারবি তো!

এই তো সেদিন আমার নিচের ভাড়াটিয়ার বউ টা এসছিল ছাদে কাপড় মেলে দিতে, দিয়ে তোর সাথে কথা বলছিল দেখলাম। ও নাকি তোকে খুব পছন্দ করত এক সময়। ওর প্রাক্তন নাকি ওকে নিয়ে ঘুরতে গেলেই কাঠমল্লিকার ছায়ায় বসে ওর মাথায় একটা একটা করে ফুল গুঁজে দিত। তার পর নাকি একদিন সে চলে যায়। ওর বিয়ে হয় অন্য একজনের সাথে। যাক এখন ওরা দুজনে সুখী, আমার বেশ ভালো লাগে ওদের। মাঝে মাঝে আশে আমার কাছে মেয়েটা , আমার তিন্নির বয়সে। তিন্নি নাকি এই নিয়ে নীল কে বলেছে শুনলাম,""মা কিন্তু আমার থেকে বেশি ওকে ভালোবেসে ফেলছে।"" পাগলী মেয়ে একটা।

আমি না থাকলে নিচের মেয়ে টাকে তোকে দিয়ে যাবো। তুই আমার মত করে ওকে ভালবাসি, ফুল ধরাবি, গন্ধ ছড়াবি।

চোরাবালি হলে কিন্তু কিছু মনে করিস না। ও তো বাচ্চা, আমার মত বয়সে এলে সব ঠিক হয়ে যাবে। মানিয়ে নিস।

"""কাঠগোলাপের সাদার মায়া মিশিয়ে দিয়ে ভাবি আবছা নীল তোমার লাগে ভালো।"" 

Comments

Popular Posts